নিজস্ব সংবাদদাতা :
অবশেষে কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী খাদিজা বেগম অপহরন নাটকের অবসান ঘটেছে। বেরিয়ে এসেছে পরকীয়া কাহিনী। পুলিশ মোবাইল ‘কল লিস্ট’ এর সূত্র ধরে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে। গত ১১ নভেম্বর ঢাকার নবাবগঞ্জের ‘দেওয়ান ক্লিনিক’ থেকে ঘটনার নায়ক ফারুখ হোসেনকে আটক করে পুলিশ। অভিযানে নের্তৃত্ব দেন গোপালপুর থানার দারোগা তোফাজ্জল হোসেন। মামলার সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন সহকারি পুলিশ সুপার (শিক্ষানবীশ) জিন্না আল মামুন। গোপালপুর থানার ওসি জহিরুল ইসলাম জানান, প্রেমিক ফারুখের বাড়ি বিলডগা গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল জলিল। নবাবগঞ্জের ওই ক্লিনিকে ফারুখ চাকরি করে। ফারুখের আটক হওয়ার খবর শুনে উদ্বিগ্ন খাদিজা গত বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকার নবাবগঞ্জের বান্দুরা বাজারের ভাড়াটে বাসা থেকে গোপালপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। বিকেলে সোজা থানায় গিয়ে পুলিশের নিকট সারেন্ডার করে। এরপর পুলিশের নিকট অদ্ভুত এক দাবি তোলে খাদিজা। বলে ‘আমি ফারুককে ভালোবাসি। ওকে পাওয়ার জন্য ঘর ছেড়েছি। আমাকে কেউ অপহরন করেনি’। এমনকি জিজ্ঞাসাবাদের সময় খাদিজা পুলিশকে বারংবার বলছিলো প্রবাসি স্বামী মফিজকে তালাক দিয়ে ফারুখকে সে বিয়ে করবে। কাজেই রিমান্ডে এনে ফারুখকে যেন নির্যাতন না করা হয়। এর আগে পুলিশ ফারুখকে গ্রেফতার দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার ১২ নভেম্বর সকালে টাঙ্গাইল আদালতে হাজির করে রিমান্ড প্রার্থনা করে। বিজ্ঞ আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। গত শুক্রবার ১৩ নভেম্বর খাদিজাকে আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। আজ শনিবার আদালতে হাজির করা হলে বিজ্ঞ বিচারক তাকে বাবার হেফাজতে জামিন মঞ্জুর করেন। বাবার দেয়া তথ্য অনুযায়ী খাদিজার বয়স ১৬ এর বেশি নয়। ওসি জানান, অর্ন্তধানের পর খাদিজা ঢাকার নবাবগঞ্জের বান্দুরা বাজারে একটি ভাড়া বাসায় থাকতো। খাদিজা নিষিদ্ধ প্রেমের টানের ঘর ছাড়লেও আইনের দৃষ্টিতে অনুকম্পা পাওয়ার সুযোগ পাবেনা। মেডিক্যাল পরীক্ষায় ভিক্টিমের বয়স ১৮ এর নিচে হলে অপহরন ও ধর্ষনের অভিযোগ পোক্ত হতে পারে। এর আগে গত ৩ অক্টোবর খাদিজা হাদিরা গ্রামের বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসি স্বামী মফিজ ফকিরের বাড়ি থেকে রহস্যজনকভাবে অন্তর্ধান হয়। ৫ অক্টোবর তার শ্বাশুড়ি মলিদা বেওয়া পুত্র বধূ নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গোপালপুর থানায় জিডি দায়ের করেন। খাদিজার বাবা বিলডগা গ্রামের ইউসুফ আলী জ্যাষ্ঠ পুত্র গোলাফ হোসেনের মোবাইলে আসা একটি রহস্যজনক কলের (০১৬৮৫৫১০২৯৯) প্রসঙ্গ টেনে অভিযোগ করেন তার কণ্যাকে অপহরন করা হয়েছে। গত ২৩ অক্টোবর ইউসুফ আলী গোপালপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হাদিরা পশ্চিম পাড়া গ্রামের মৃত মোজাফফর হোসেনের পুত্র আব্দুল হামিদ, বাজার হাদিরা গ্রামের জামাল হোসেনের পুত্র সুমন হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা আরো তিনজনকে আাসামী করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, আসামীরা বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ফুঁসলিয়ে খাদিজাকে অপহরন করেছে। এদিকে পুলিশ মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে নামে। মোবাইল কোম্পানির সরবরাহ করা কল লিস্ট যাচাইবাছাই করে ওই সন্ধিগ্ধ নাম্বারে প্রেমিক ফারুখের যোগাযোগ করার সূত্র খুঁজে পায়। তদন্তকারি দারোগা জানান, ফারুখ ও খাদিজা উভয়েই পরকীয়ার টানে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বেচ্ছায় স্বীকারুক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। খাদিজার বাবা জানান, ‘বাবা, বড় কষ্টে আছি। মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ চিন্তা করে প্রবাসি পাত্রের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। মেয়েটারে ইবলিশে ধরেছে। তাই সবার মুখে সে চুনকালি মেখে দিয়েছে।